‘মনে হচ্ছে যেন এ জায়গাটাতে আমি আগেও এসেছি।’স্মিত হেসে শুধু এটুকুই বলতে পারলেন অ্যান্ডি মারে। আর কীই-বা বলতে পারতেন? এর আগে তিনবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে উঠে নোভাক জোকোভিচের কাছে হার মানতে হয়েছে। চতুর্থবারের মতো কালকের চিত্রনাট্যটাও এক। মারেকে ৬-১, ৭-৫, ৭-৬ (৭-৩) ব্যবধানে
হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে নিলেন জোকোভিচ।রুপালি কাপটার পাশাপাশি একটা রেকর্ডও হলো জোকোভিচের। উন্মুক্ত যুগে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সবচেয়ে বেশিবারের (৫টি) শিরোপাধারী আগেই ছিলেন। কাল ষষ্ঠ শিরোপাটি জিতে উন্মুক্ত যুগ ও তার আগের রেকর্ড মিলিয়ে এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ শিরোপা জিতে সার্বিয়ান তারকা বসে গেলেন রয় এমারসনের পাশে। বসলেন আরও দুই কিংবদন্তি রড লেভার ও বিয়ন বোর্গের পাশেও, ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্লাম সংখ্যার বিচারে (১১টি)।
গত কয়েক দিনে মেলবোর্ন পার্ক বেশ কয়েকটি ধ্রুপদি ম্যাচ দেখেছে; ফেদেরার-জোকোভিচ, রাওনিচ-মারে, সেরেনা-কারবার...। পুরুষ এককের ফাইনালটি কাল হয়তো অতটা রোমাঞ্চ ছড়ায়নি, তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। র্যা ঙ্কিংয়ের সেরা দুজন প্রথম সেট ছাড়া বাকি ম্যাচজুড়ে চোখে চোখ রেখে লড়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত চোখের পলক পড়ল মারেরই।
স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। ম্যাচের আগেই মারে তাই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন, জরুরি প্রয়োজন হলে ম্যাচ ছেড়েই উঠে যাবেন। যেতে হয়নি মারেকে, সেই চিন্তাটা কি আচ্ছন্ন করে রেখেছিল? নাকি স্রেফ ফাইনালের স্নায়ুচাপ? কারণ যা-ই হোক, ম্যাচে মনোযোগ ফেরাতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। র্যা ঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা জোকোভিচ সেটির পুরো সুবিধা নিলেন। ব্রিটিশ তারকার প্রথম দুই সার্ভিসই ভাঙলেন ‘জোকার’। সেটটাও জিতলেন ৬-১ গেমে।
প্রথম সেটের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘাটতি পরের দুই সেটে পুষিয়ে দিয়েছেন মারে-জোকোভিচ। প্রতিটি গেমে, প্রতিটি পয়েন্টের জন্য আপ্রাণ লড়াই করে গেছেন। দুই সেটে নয়টি গেমই গড়িয়েছে ‘ডিউসে’। জোকোভিচ মারের সার্ভিস ভেঙেছেন তিনবার, মারে দুবার। দ্বিতীয় সেট ৭-৫, তৃতীয় সেট গড়াল টাইব্রেকারে। তাতে মারেকে ৭-৩-এ হারিয়ে সেট, ম্যাচ আর শিরোপা জিতলেন জোকোভিচ।
তবে মারের হয়তো এখনো প্রথম সেটের জন্য আক্ষেপ হবে। ম্যাচের বাকিটায় যে খুব ব্যবধান ছিল না। পুরো ম্যাচে জোকোভিচের (৪১) চেয়ে ‘আনফোর্সড এরর’ বেশি করেছেন মারে (৬৫), কিন্তু এগিয়ে ছিলেন উইনারের হিসেবে (৪০-৩১)।
প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁঝ যতই থাক, দিন শেষে মারে-জোকোভিচের ম্যাচে সেটি ছাপিয়ে বন্ধুত্বের সুরই বেশি বাজে। কাল ম্যাচ শেষেও তা-ই হলো। মারের মুখে জোকোভিচের প্রশংসা, ‘ছয়টি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতার জন্য নোভাককে অভিনন্দন। অবিশ্বাস্য অর্জন!’ জোকোভিচও শুভেচ্ছাবৃষ্টিতে ভিজিয়েছেন মারেকে, ‘তুমি একজন চ্যাম্পিয়ন, অসাধারণ বন্ধুও। আমি নিশ্চিত ভবিষ্যতে এই ট্রফিটা তুমি জিতবে।’ অনাগত সন্তানের জন্য বন্ধুকে শুভকামনাও জানালেন জোকোভিচ। তবে সন্তানের মুখ দেখেই হয়তো এই পরাজয়ের ক্ষতে প্রকৃত প্রলেপটা পড়বে মারের। গার্ডিয়ান।
জোকোভিচের ১১ গ্র্যান্ড স্লাম
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ৬
উইম্বলডন ৩
ইউএস ওপেন ২
গ্র্যান্ড স্লাম জয়ী শীর্ষ পাঁচ
১৭ রজার ফেদেরার (সুইজারল্যান্ড)
১৪ পিট সাম্প্রাস (যুক্তরাষ্ট্র)
রাফায়েল নাদাল (স্পেন)
১২ রয় এমারসন (অস্ট্রেলিয়া)
১১ রড লেভার (অস্ট্রেলিয়া)
বিয়ন বোর্গ (সুইডেন)
নোভাক জোকোভিচ (সার্বিয়া)
১০ বিল টিলডেন (যুক্তরাষ্ট্র)
Source (http://www.prothom-alo.com/sports)